খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা - খেজুরের পুষ্টিগুণ
প্রিয় পাঠক নিজেকে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা অনেক ভালোভাবে আলোচনা করা রয়েছে। এবং এর সাথে খেজুর খাওয়ার পুষ্টিগুণ কি তা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এই আর্টিকেল পড়ার মাধ্যমে আপনার খেজুর খাওয়ার আগ্রহ বেড়ে যাবে।
সূচিপত্র: খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা ও পুষ্টি গুণ
খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা - খেজুরের পুষ্টিগুণ
খেজুর একটি বিশেষ গুন সম্পন্ন একটি ফল। খেজুর ও খেজুর গাছ দুটোই বেশ উপকারী। শুরুতেই বলতে হবে খেজুর গাছের রস দিয়ে তৈরি হয় গুড় এছাড়াও এমনি ভাবেও শরবত হিসেবে খায়। এছাড়াও খেজুর পাতার তৈরি পাটি বেশ জনপ্রিয় বাংলাদেশে ও আরো অন্যান্য কিছু দেশে।
মূলত সৌদি আরব কে খেজুরের রাজ্য বলা হয়। কোন যত্ন ছাড়াই ও অল্প রসান মাটিতেই খেজুর গাছ সহজেই বেড়ে উঠতে সক্ষম। খেজুর এ আছে অনেক উপকারী গুনাগুণ। মুসলিম ধর্মতে খেজুর কে বিশেষ প্রাধান্য দেওয়া হয়।
আরো পড়ুনঃ মধু ও কালোজিরা খাওয়ার সঠিক নিয়ম ও উপকারিতা কি বিস্তারিত জানুন
খেজুর খাওয়া সুন্নত। এ ফলে কোনো খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা কিন্তু অপকারিতা নেই বললেই চলে। খেজুর শরীরের পানির ঘাটতি পূরণ করতে সাহায্য করে। এছাড়াও খেজুর অনেক রোগের ঔষধ হিসেবে কাজ করে। যেমন কোষ্ঠকাঠিন্য, উচ্চ রক্তচাপ,হাড় মজবুত করা ইত্যাদি।
খেজুর খাওয়ার অপকারিতা
এই ফলের তেমন কোন অপকারিতা নেই। খেজুর এমন একটি ফল যার গুনাগুণ বলে শেষ করা সম্ভব নয়। এর অপকারিতা সম্পর্কে এমন কোন মতামত খুজে পাওয়া কষ্টসাধ্য।
তবে যাদের মিষ্টি জাতীয় খাবারে সমস্যা আছে তাদের ক্ষেত্রে খেজুর অল্প পরিমাণে খাওয়া উত্তম। এছাড়া খেজুরের কোনো অপকারিতা বলা কারো পক্ষে সম্ভব নয়।
পুরুষদের জন্য খেজুরের উপকারিতা
খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা মেনে নিয়মিত খেজুর খেলে শরীরের স্টামিনা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া পুরুষদের শরীরের যৌন ক্ষমতা বাড়াতে খেজুর ভূমিকা অপরিসীম। এছাড়াও পুরুষদের শুক্রাণু বৃদ্ধি পায় খেজুর খেলে। যেসকল পুরুষেরা যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি করার উপায় খুঁজছেন তাদের জন্য বেস্ট অপশন হলো প্রতিদিন সকালে খেজুর এবং দুধ একসাথে খাওয়া এতে যৌনতা বৃদ্ধি পায়।
শরীরের সকল দুর্বলতা কেটে যায়। খেজুর খেলে মানসিক চাপ কমে যায়। যারা সারাদিন কাজ করে ক্লান্ত নিজের যত্ন নিতে পারেন না কিন্তু সহজেই নিজেকে চঞ্চল রাখতে চান তারা চাইলে প্রতিদিন খেজুর খেতে পারেন। এতে শরীরের ক্লান্তি ও মানসিক চাপ দুটোই কমে যাবে।
অনেক আগে থেকেই খেজুর খাওয়ার বিশেষ প্রচলন রয়েছে ইসলাম ধর্মে। খেজুর কে পুরুষদের যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও অনেকে এটিকে একটি পবিত্র ফল হিসেবে মান্য করে থাকেন। তাই খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে খাওয়া উচিত।
শুকনা খেজুর খেলে কি হয়
রমজান মাসে খেজুরের চাহিদা তূলনা মূলক ভাবে বেড়ে যায়। কারন এটি মুসলিম দের রোজা পালনের সময়। সারাদিন রোজা রাখার পর ইফতার এ প্রথমেই খেজুর খেয়ে রোজা ভঙ্গ করেন মুসলিম রা। সারাদিনের পানির ঘাটতি পূরণ করে খেজুর। শুকনো খেজুরের মধ্যে রয়েছে অনেক পুষ্টিকর গুনাগুণ।
এছাড়াও স্বাভাবিক সময়ে খেজুর শরীরকে হাইড্রেট রাখতে সাহায্য করে। সৌদি আরব ও অন্যান্য মরুভূমির দেশে খেজুরের মাধ্যমে পানির ঘাটতি পূরণ করা হয়। শুকনো খেজুরের স্বাদ মিষ্টি হয়ে থাকে। হালকা খয়েরী রঙের হয়ে থাকে।
এছাড়াও খেজুর গাছ থেকে পাড়ার পর কিছুদিনের মধ্যেই নষ্ট হয়ে যায় তাই এটিকে শুকিয়ে সংরক্ষণ করলে সারাবছর খাওয়া সম্ভব। এজন্য প্রায় সকল জায়গায় শুকনো খেজুরের চাহিদা অনেক বেশি। খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা জানার চাহিদা বেশি তাই জানানো হচ্ছে।
শুকনো খেজুর খাওয়ার নিয়মে
খেজুর যেকোনো ভাবেই খাওয়া সম্ভব। প্রত্যেকটি খেজুরের ভেতরে থাকে একটি করে বীজ। সাধারণত শুকনো খেজুর ভিজিয়ে রেখে তারপর খেলে বেশি ভালো হয়। শুকনো খেজুর ভিজিয়ে রাখলে এটি নরম হয়ে আসে ফলে খেতে বেশি সুস্বাদু লাগে। এছাড়াও রাতে দুধের সাথে খেজুর ভিজিয়ে রেখে সকালে খাওয়া সুন্নত।
মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনটি করতেন এছাড়াও তিনি প্রতিদিন সকালে দুটি করে খেজুর খাওয়ার উপদেশ দিয়েছেন। খেজুর থেকে বীজ আলাদা করে তারপর খেজুর ধুয়ে খেতে হবে। খেজুর দিয়ে মিষ্টি জাতীয় বিভিন্ন খাবার ও শরবত বানানো যায়।
শুকনো খেজুর এমনিভাবে ও খেতে অনেক সুস্বাদু আর দুধের সাথে বা অন্যান্য মিষ্টি খাবারের সাথে খেতেও অতুলনীয় স্বাদের হয়। সেমাই অথবা পায়েশের সাথে খেজুর দিয়ে খেতে বেশ মজা লাগে। এভাবেই আপনি চাইলে শুকনো খেজুর খেতে পারেন।
এছাড়াও অফিস টাইমে সাথে রাখলে একটি করে খেতে পারেন।
সকালে খালি পেটে খেজুর খাওয়ার নিয়ম
খালি পেটে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা রয়েছে। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেজুর খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর হয়। যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য আছে, সে ক্ষেত্রে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। শুকনো খেজুর ধুয়ে বীজ ফেলে দিয়ে দুই তিনটা খেজুর খালি পেটে খেলে বিভিন্ন ধরনের রোগ থেকে উপসম পাওয়া যায়।
শুকনো খেজুর ভিজিয়ে খালি পেটে খেলে খাবার দ্রুত হজম হয়। দৈনন্দিন জীবনে নিজেকে সুস্থ সবল রাখতে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেজুর খাওয়ার কোন বিকল্প নেই। খালি পেটে খেজুর খাওয়ার পর সারাদিন শরীরের ওপর মানসিক চাপের তেমন প্রভাব পড়বে না।
শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন খেজুর খেয়ে।যারা খাবার খাওয়ার পর গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা তে ভোগেন তাদের এ সমস্যা সমাধানে খেজুর বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও খেজুর বাচ্চাদের স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সহায়তা করে থাকে। তবে কোন অপকারিতা নেই।
দুধে খেজুর ভিজিয়ে খাওয়ার নিয়ম
রাতে দুধের সাথে খেজুর ভিজিয়ে রেখে দিয়ে সকালে পান করুন এতে শরীরের ক্যালসিয়াম এর ঘাটতি পূরণ হবে, দুর্বলতা কেটে যাবে, যৌনতা বৃদ্ধি পাবে, মানসিক চাপ কমবে এছাড়াও গোপন দুর্বলতা কেটে যাবে।
আমাদের মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতিদিন সকালে শুকনো খেজুর খেতে পছন্দ করতেন। তিনি দুধের সাথে খেজুর মিশিয়ে খেতেন এবং তার সাহাবিদের কে এটি খাওয়ার পরামর্শ দিতেন। শারীরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করে দুধ ও খেজুর।
হাড়ের ক্ষয় ও ব্যাথা কমাতে সাহায্য করে দুধ-খেজুর। তাই এ খাবারটি পুরুষ রা প্রতিদিন খাওয়ার অভ্যাস করুন। খেতে যেমন সুস্বাদু শরীরের জন্য তেমন উপকারী।
মধু ও খেজুর খাওয়ার নিয়ম
মধু তৈরি হয় মৌমাছির মাধ্যমে। নানান রকম ফুলের রেণু সংগ্রহ করে তারপর মৌমাছি মধু তৈরি করে। মৌচাক কেটে তা থেকে মধু সংগ্রহ করে মানুষেরা। মধু অত্যন্ত মিষ্টি তরল একটি খাবার। খাবার হিসেবে মধু ব্যবহার করা হলেও বর্তমানে ত্বকের নানা জটিল সমস্যা দূর করতে মধু ব্যবহার করা হয়।
খেজুর ও মধু দুটি একসাথে খেতে অতুলনীয় স্বাদ। এটির চাহিদা রয়েছে সারা বিশ্বে। হানি নাটস বলা হয় মধু ও বাদাম খেজুর ইত্যাদির মিশ্রন কে। শরীরের জন্য উপকারী একটি খাবার হচ্ছে মধু ও দুধ সাথে খেজুর। মিষ্টির পরিবর্তে এই খাবারটি বেশ জনপ্রিয়।
ঘুমানোর আগে খেজুর খেলে কি হয়
খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা হয়েছে। ঘুমানোর আগে খেজুর খাওয়া শরীরের জন্য অনেক ভালো। সারাদিনের ক্লান্তি নিয়ে ঘুমাতে গেলে অনেক আজেবাজে স্বপ্ন আসে। এছাড়াও কোনো কিছুতেই মন বসে না। যেহেতু রাতের খাবার খেয়ে ঘুমানোর পর লম্বা সময় ধরে শরীর বিশ্রামে থাকে সেহেতু শরীর ডিহাইড্রেট হওয়া স্বাভাবিক।
এ সমস্যা গুলো দূর করতে রাতে খেজুর খেয়ে ঘুমানোর প্রয়োজন।খেজুর খেয়ে ঘুমালে মানসিক চাপ গুলো কমে যায়। শরীরের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়।হাতে পায়ের হাড় ব্যাথা দূর হয়। চুলের গোড়া মজবুত হয়। দাঁতের গোড়ালি শক্ত হয়। রাতে ঘুমানোর আগে খেজুর খেলে ক্লান্তি, দুর্বলতা ও মানসিক চাপ মুক্ত সুন্দর ঘুম হয়।
অতিরিক্ত খেজুর খেলে কি হয়
খেজুর খাওয়া শরীরের জন্য উপকারী তবে প্রয়োজনের বেশি খেলে তা ক্ষতি কারণ হতে পারে। যেমন প্রয়োজনের থেকে বেশি মাত্রায় খেজুর খেলে গ্যাসট্রিকের কমার পরিবর্তে বেড়ে যায়, এছাড়াও পেট ফাঁপা দেয় এবং অনেক সময় ডায়রিয়া হতে পারে।
খেজুরে থাকে ফাইবার যা হজম শক্তি বাড়ায়। কিন্তু বেশি পরিমাণে ফাইবার শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তাই যতটুকু দরকার ঠিক ততটুকুই খাওয়া উচিত। প্রয়োজন ও শারীরিক চাহিদার তুলনায় কোনো কিছুই বেশি ভালো না।
আমাদের পরামর্শ
প্রিয় পাঠক এতক্ষণ আমরা খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে আলোচনা করলাম। এর সাথে খেজুর খাওয়ার যে সকল পুষ্টিগুণ রয়েছে তা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে ওপরে। উপরের কোন অংশ যদি আপনি বুঝতে না পারেন তবে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট করে জানাবেন আমরা ভালোভাবে বোঝানোর চেষ্টা করব।
খেজুর খাওয়ার মাধ্যমে আমাদের শরীরের অনেক ধরনের খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা রয়েছে যেগুলো উপরে আলোচনা করা রয়েছে। এর জন্য আমাদের নিয়ম অনুযায়ী খেজুর খাওয়া উচিত। এবং খেজুর খেয়ে আমাদের শরীরকে শক্তিশালী করে তোলা উচিত। খেজুর খান। সুস্থ থাকুন ,ভালো থাকুন।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url