কাশির সাথে রক্ত আসার কারণ কি ও সমাধান জানুন
প্রিয় পাঠক কাশির সাথে রক্ত আসার কারন ও সমাধান নিচে অনেক ভালোভাবে বিস্তারিত বলা হয়েছে। কাশির সাথে রক্ত আসার কারণ গুলো জেনে খুব দ্রুত এর চিকিৎসা করা উচিত কেননা কাশির সাথে রক্ত আসা খুব ভয়াবহ সমস্যা।
সূচিপত্র :কাশির সাথে রক্ত আসার কারণ কি ও সমাধান জানুন
কাশির সাথে রক্ত আসার কারণ কি ও সমাধান জানুন
আমাদের জীবনে শারীরিক যেকোনো অসুখের মধ্যে সবচেয়ে বেশি যেটি হয়ে থাকে তা হলো ‘কাশি'। কাশি মূলত শ্বাস নালীর মধ্যে যেকোনো জীবাণু বা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে হয়ে থাকে। এছাড়াও ধুলো-বালি , দূষিত বাতাস ইত্যাদি শ্বাস নালীর মধ্যে প্রবেশের সময় আমাদের শরীরের একটি ব্যতিক্রমী প্রতিক্রিয়া তৈরি হয় যার কারণে কাশি আশে।
শুধুমাত্র এসকল কারনেই যে কাশি হয় তা কিন্তু নয়! কাশির সাথে রক্ত আসার কারণ অনেক সময় দেখা যায় কাশির সঙ্গে রক্ত আসে এটাকে চিকিৎসা শাস্ত্রে বলা হয় হোমোপটিসিস। হালকা শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ যেমন:
- হাঁপানি।
- ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজ।
- Bronchiectasis ফুসফুসক্যান্সার শ্বাসনালীর প্রদাহমূলক ব্যাধি হালকা শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ।
- যক্ষ্মাভাইরাস সংক্রমণের কারণে অথবা শ্বাস নালীর অভ্যন্তরে ঘা বা ইনফেকশন হলে কাশির সাথে রক্ত আসে।
- নানা ধরনের সংক্রামক জীবাণু রয়েছে যা ছোঁয়াচে,কারো সংস্পর্শে আসলে অথবা হাঁচি কাশির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এসকল কারনেও কাশির সাথে রক্ত আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায় সর্বপ্রথম ২০২০ সালে যখন কোভিড-১৯ দেখা দিয়েছিল সেটি ছিল ছোঁয়াচে একটি ভাইরাস যার সংক্রমণ ছড়িয়েছিল হাঁচি কাশির মাধ্যমে। এছাড়াও এটির অন্যতম একটি লক্ষন ছিল ঘন ঘন কাশির সাথে রক্ত আসা। শ্বাস নালীতে বা গলার মধ্যে ছত্রাক অথবা ব্যকটেরিয়া হওয়ার কারনে ঘা সৃষ্টি হয়। এর কারনেও কাশির সঙ্গে রক্ত আসে। কাশির সাথে রক্ত আসার কারণ জেনে ভালোভাবে চিকিৎসা করা উচিত।
এসকল সমস্যা কে সহজে নেওয়া উচিত নয় বরং দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এছাড়াও ঘরোয়া উপায়ে গরম লবন পানি দিয়ে কুলকুচি,লং চিবানো ইত্যাদি ভালো উপসম দেয়। তাছাড়া অনেক অ্যান্টিবায়োটিক রয়েছে যা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করলে দ্রুত সুস্থ হওয়া সম্ভব।
অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় কাশির সাথে দিনে ৫০০ মিলি বা তার বেশি রক্ত আসে এটাকে বলা হয় ম্যাসিভ বা বৃহদায়ন রক্তপাত। এমন অবস্থায় রোগীকে বাঁচানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। দ্রুত আইসিইউ তে ভর্তি করতে হয় এবং যে নালি থেকে রক্তপাত হচ্ছে তা নিশ্চিত করে সেটি কেটে বাদ দিতে হয়।
কাশির সাথে রক্ত বের হলে করনীয় কি?
কাশির সাথে রক্ত আসাকে বলা হয় হোমোপটিসিস। কর্ম জীবনে কাশি হলো সবচেয়ে বিরক্তিকর একটি বিষয়। যেকোনো পরিস্থিতিতে লোকসম্মুখে অথবা ব্যস্ততার মাঝে কাশি আসলে সকল মনোযোগের বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। স্বাভাবিক কাশি থেকে মুক্তি পেতে যেকোনো বাসক সিরাপ বা তুলশি সিরাপ ইত্যাদি সেবন করলে দ্রুত সুস্থ হওয়া যায়। তবে সর্বপ্রথম কাশির সাথে রক্ত আসার কারণ জেনে তারপরে চিকিৎসা শুরু করা উচিত। এবং সকল ধরনের ওষুধ ও অন্যান্য চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত।
এছাড়াও লেবু চা,আদা চা বা মশলা চা পান করলে কাশি কমে যায়। প্রায় সময় দেখা যায় অতিরিক্ত কাশিতে বুকে তীব্র ব্যথা অনুভব হয় এবং রক্ত আসে। শুনতে স্বাভাবিক মনে হলেও কাশির সাথে রক্ত আসাটা অনেক রোগের লক্ষণ হিসেবে ধরা হয়। যেমন:
- হাপানি রোগ।
- ক্যান্সার।
- যক্ষা ইত্যাদি।
কাশির সাথে রক্ত আসলে সর্বপ্রথম রক্ত পরীক্ষা করতে হবে পাশাপাশি কাশির ধরন বুঝতে হবে। এরপর রোগ অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে। যেমন ধরুন ব্লাড ক্যান্সার হোলে কাশির সাথে সাথে শরীরের রক্ত কমে যাবে।
এবং শরীরে রক্ত দিতে হবে পাশাপাশি ক্যামো থেরাপি দিতে হবে। হাঁপানি হলে বিশেষ প্রক্রিয়ায় অক্সিজেন নিতে হবে। যক্ষা হলে ঔষধ সেবন করতে হবে। এছাড়াও বুকের ইনফেকশন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং ঔষধ খেতে হবে নয়তো ইনফেকশন ছড়িয়ে গিয়ে ক্যান্সার হতে পারে।
এলার্জি হলে কি কাশির সাথে রক্ত যায়
কাশির সাথে রক্ত আসার কারণ কি এলার্জি হতে পারে? যাদের শরীরে এলার্জি আছে তাদের কাশির সাথে যদি রক্ত আসে তবে তারা চিন্তায় থাকেন, যে এলার্জির জন্য এটি হয়েছে কিনা। এ প্রসঙ্গে বলতে চাই যে ইংরেজি allergy শব্দের অর্থ হলো কোনোকিছুর প্রভাবে আমাদের শরীরের যে বিপরীত প্রতিক্রিয়া তৈরি হয় তাকেই এলার্জি বলে।
আমাদের শরীরের রক্তে নানা ধরনের উপাদান রয়েছে এগুলোর কোনো একটি বেশি বা কম হয়ে গেলে এলার্জি সৃষ্টি হয়। যেমন:
- চুলকানি।
- গোটা ওঠা।
- ত্বক লাল হয়ে যাওয়া।
- মেছতা পড়া।
- চুল ঝড়ে যাওয়া ইত্যাদি।
আবার যখন রক্তের কোষ গুলো নষ্ট হয়ে যায় তখন তা যেকোন ভাবে জমাট বেঁধে গেলে অথবা ঘা থেকে রক্ত কোষ নষ্ট হতে থাকলে তা থেকে অনেক রোগ ব্যাধির লক্ষণ শুরু হয়। যেমন জ্বর, কাশির সাথে রক্ত আসা,বমির সাথে রক্ত আসা,নাক দিয়ে রক্ত আসা ইত্যাদি।
এলার্জি হলে কাশির সাথে রক্ত আসে কিনা এটার এখনো তেমন কোন সুস্পষ্ট ধারণা চিকিৎসা শাস্ত্রে নেই। তাই তেমন কোন কাশির সাথে রক্ত আসলে সেটির কারন হিসেবে এলার্জিকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত নয়।
গলায় ইনফেকশন হলে কি কফের সাথে রক্ত যায়
গলায় ইনফেকশনের প্রধান কারণ হলো ভাইরাস বা ব্যকটেরিয়া। গলায় সংক্রমণের জন্য দায়ী ভাইরাসই ফ্লু, সর্দি, হুপিং কাশি, চিকেনপক্স এবং হামের কারণ। এসব সমস্যার জন্য গলা ব্যথা ফুলে যায় অথবা কফের সঙ্গে রক্ত যায়।ঘন ঘন কাশি হতে থাকলে ইনফেকশন স্থানে ক্ষত সৃষ্টি হয়। ফলে জোরে কাশি দিলেই ক্ষত থেকে রক্ত বের হয় এবং কাশির সাথে বাইরে আসতে শুরু হয়। বাচ্চা হোক বা বড় শীতকালে সকলেরই সর্দি কাশি হয়েই থাকে।কারো শুকনো কাশি আবার কারো ঘন মাত্রায়।যেকোনো কাশির সিরাপ খেলেই দ্রুত উপসম পাওয়া যায়। কাশির নির্দিষ্ট চিকিৎসা না করালে তা গলায় ইনফেকশনের তৈরি করে আর এরপরে কাশির সাথে রক্ত আসা শুরু হয়। এজন্য কাশি হলে অবহেলা না করে দ্রুত ঔষধ সেবন করবেন।
যেকোনো ছোট খাটো রোগ থেকেই বড়ো একটি রোগের উৎপত্তি হয় তাই কোন সমস্যা হলে তাৎক্ষণিকভাবে তার চিকিৎসা করুন।
কাশির সাথে রক্ত আসলে কোন ডাক্তার দেখাবো
হালকা কাশি সাধারণত তাড়াতাড়ি সেরে যায়। তবে সেটি কোন রোগের লক্ষণ হলে সহজে সাড়ে না এবং এমন অবস্থায় কাশির সাথে রক্ত আসে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কাশির সাথে যদি রক্ত আসে তবে কোন ডাক্তার বা চিকিৎসা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিবেন।
মূলত কাশি জাতীয় যেকোনো রোগের ক্ষেত্রে যেকোনো পালমোনোলজিসট এর কাছে যাওয়া উচিত।পালমোনোলজিস্টরা ফুসফুস এবং শ্বাসনালীর রোগ নির্ণয় বিশেষজ্ঞ। তাদের বিশেষ ডিগ্রি থাকে গলা এবং ফুসফুসের সকল সমস্যা ও রোগের সমাধানের ওপর।
তাদের কাছে গেলে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ঔষধ দিবেন অথবা রোগের অবস্থা অনুযায়ী অপারেশন করার উপদেশ দিবে।
কাশির সাথে রক্ত আসলে কি কি পরীক্ষা করতে হয়'
কাশির সাথে রক্ত আসলে অবশ্যই আগে চিকিৎসকের কাছে যাবেন। তারা যেসকল টেস্ট দিবে তা করাবেন। যেমন:
কাশির সাথে রক্ত আসার কারণ যেনে কাশির সাথে রক্ত আসলে অবশ্যই আগে রক্ত টেস্ট করাতে হবে। রক্তের মধ্যে কোন ভাইরাস আক্রমণ হয়েছে কিনা তা বুঝতে CVC টেস্ট করতে হবে।
এতে শরীরে রক্তের পরিমাণ বোঝা যাবে এবং রক্তের উপাদান গুলো কতটুকু পরিমাণ আছে তা নিশ্চিত করা যায়। আর রক্তের উপাদান গুলোতে কোন সমস্যা আছে কিনা তাও নিশ্চিত করা সম্ভব।এছাড়াও বুকের এক্স-রে করাতে হবে।
টিবি বা যক্ষা হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করতে কফ টেস্ট করতে হবে। সমস্যা যদি এতেও চিহ্নিত না হয় তবে androscopy র মতো একটি টেস্ট bronchoscopy করাতে হবে। এটির মাধ্যমে বোঝা যায় গলার মধ্যে বা ফুসফুসের মধ্যে জটিল কোন সমস্যা হয়েছে কিনা।
কাশির সাথে রক্ত আসলে কি ওষুধ খাব
যক্ষা বা টিবি হলে নির্দিষ্ট ডোজ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করলে রোগি দ্রুত সুস্থ হয়ে যায়। আর তাছাড়া যদি ফুসফুসের ক্যান্সারের কারণে রক্ত আসে সেক্ষেত্রে , ক্যান্সার স্টেজ অনুযায়ী বিশেষ চিকিৎসা করতে হবে।
আর যদি সাধারণ কোনো সমস্যার কারণে কাশির সাথে রক্ত আসে এবং বাসায় রেখে সুস্থতা নিশ্চিত করা যায়। তখন হাসপাতালে ভর্তি করে তারপর স্যালাইন, ইনজেকশন দিয়ে ও ঔষধ এর দ্বারা রোগিকে সুস্থ করতে হবে।
আমাদের পরামর্শ
প্রিয় পাঠক কাশির সাথে রক্ত আসার সাথে সাথে আমাদের এটা নিয়ে সতর্ক হওয়া উচিত। কাশির সাথে রক্ত আসার কারণ খুঁজে বের করা উচিত। এবং আমাদের এর যথাযথ পরীক্ষা করে ওষুধ সেবন করা উচিত।
আপনি যদি ওপরের কোন অংশ বুঝতে না পারেন। তবে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট করে জানাবেন আমরা বোঝানোর চেষ্টা করব। সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url