বাসর রাতের নিয়ম কানুন - যে ১০টি প্রশ্ন অবশ্যই করবেন- বিস্তারিত জানুন
প্রিয় পাঠক বাসর রাতের নিয়ম কানুন - যে ১০টি প্রশ্ন অবশ্যই করবেন- বিস্তারিত জানুন। বাসর রাতে আপনি যদি কোন ভুল করে ফেলেন তবে সেটি সারা জীবনের ভুল হয়ে দাঁড়াবে।
এর জন্য বাসর রাতের নিয়ম কানুন নিচের সব নির্দেশনা অনুযায়ী বাসর রাত শুরু করুন এবং যে দশটি প্রশ্ন অবশ্যই করবেন নিচে বিস্তারিত দেওয়া হল।
সূচিপত্র: বাসর রাতের নিয়ম কানুন - যে ১০টি প্রশ্ন অবশ্যই করবেন
বাসর রাতের নিয়ম কানুন - যে ১০টি প্রশ্ন অবশ্যই করবেন- বিস্তারিত জানুন
ছেলে মেয়ে সকলের জন্যই জীবনের সবচেয়ে সুন্দর ও স্বরণীয় মূহুর্ত হলো বিয়ের প্রথম রাত অর্থাৎ বাসর রাত। জীবনের সবচেয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণ কোনটি যদি প্রশ্ন করা হয় তবে উত্তরে বলা যায় বিয়ে বা জীবনসঙ্গী নির্বাচন। মানুষ বিয়ে করে মূলত তাদের সারাজীবনের জন্য একজন যত্নবান সঙ্গী পাওয়ার জন্য। তাই রাত কে মজাদার করতেবাসর রাতের নিয়ম কানুন জেনে নিন
প্রত্যেক ধর্মেই বিয়ে করতে অনেক নিয়ম কানুন পার করে তারপর বাসর রাতের দিনটি আসে। ছেলে - মেয়ে উভয়ই অনেক সংকোচ বোধ করেন কীভাবে বাসর রাত শুরু করবেন বা বাসর রাতের নিয়ম কানুন কি ও কীভাবে আপনার সঙ্গীর সাথে নিজেকে মানিয়ে নিবেন।
ইসলামী নিয়ম অনুযায়ী বাসর ঘরে সর্বপ্রথম কাজ হলো স্বামী স্ত্রী দুজনে একসাথে নফল নামাজ আদায় করতে হবে এবং সৃষ্টিকর্তার কাছে শুকরিয়া আদায় করতে হবে। এরপর স্ত্রী স্বামীকে সালাম করবে। তারপর স্বামী স্ত্রী কে উপহার দিবে।
উপহার গ্রহনের পর স্বামী স্ত্রী দুজনে নিজেদের মনের কথা আলোচনা করবে তারপর দুজন একে অপরের মনের মিল হলে একে অপরের সম্মতি নিয়ে সহবাস করবে। দুজন অচেনা মানুষের মিলনের রাত হলো বাসর রাত। অনেক সুন্দর মুহূর্ত তৈরি হয় এই রাতে দুজন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে। তাই বাসর রাতের নিয়ম কানুন জেনে ভালোভাবে বাসর রাত পালন করুন।
বিয়ের প্রথম রাতে আপনি আপনার সঙ্গীকে যে ১০ টি প্রশ্ন করবেন
বিয়ে হচ্ছে দুটি জীবনের সম্পূর্ণ নতুন করে বাঁচার একটা অধ্যায়ের সূচনা। এখানে একে অপরকে জেনে নেওয়া খুব জরুরী। বাসর রাত হলো দুজনের মিলনের রাত। তবে তার আগে নিজেদের মনের কথা গুলো একে অপরকে জানানো জরুরি। নিজেদের কে বুঝে নেওয়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বাসর রাতে আপনি আপনার সঙ্গীর কাছে বিয়ের প্রথম রাতে আপনি আপনার সঙ্গীকে যে ১০ টি প্রশ্ন করবেন
তা নিম্নে দেওয়া হলো -
তা নিম্নে দেওয়া হলো -
- আপনি কী আমাকে ভালোবাসেন : এ প্রশ্ন টি করার উদ্দেশ্যে হচ্ছে পরিবারের পরিবারের পছন্দ অনুযায়ী বিয়ে হলে অনেক সময় আপনার সঙ্গী আপনাকে ভালো নাও বাসতে পারে। জোর পূর্বক তৈরি হওয়া সম্পর্কে ভালোবাসা থাকে না।
- আমার সাথে সারাজীবন কাটাতে কী আপনি প্রস্তুত: দুজন মানুষকে আজীবনের জন্য এক করে রাখার জন্যই বিয়ে হয়। তাই কে কার জন্য কতটুকু ত্যাগ করতে পারবে তাও জেনে নেওয়া প্রয়োজন।
- আপনি কী আমার বর্তমান সৌন্দর্য কে ভালোবাসেন: রুপ সৌন্দর্য এসব খনিকের জিনিস। এখন যেমন আছেন আজীবন তেমন থাকবেন না।তাই আপনার সঙ্গী যদি আপনার রূপ কে ভালোবেসে বিয়ে করেন তাহলে যখন সৌন্দর্য থাকবে না. তখন সে আপনাকে অবহেলা করবে। তাই এ ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন। কাউকে তার রুপ সৌন্দর্য দিয়ে বিচার করে কখোনোই বিয়ে করা উচিত নয়।
- আমি যদি অসুস্থ হয়ে পড়ি আপনি কি আমার পাশে থাকবেন: জীবনে চলার পথে শারীরিক অসুস্থতা খুবই কমন বিষয় তবে সঙ্গী অসুস্থ থাকলে অনেক পুরুষ বা নারী পরকিয়া তে লিপ্ত হয় যায়। তাই যে এ ব্যাপারে আপনাকে আস্বস্ত করবে যে-তোমাকে ভালোবাসি কখনো কোনো পরিস্থিতিতে তোমার সঙ্গ ছাড়বো না। তোমার খারাপ এবং ভালো দুই অবস্থাতেই পাশে থাকবো তাকেই জীবন সঙ্গী হিসেবে গ্রহণ করা উচিত।
- সন্তান নেওয়ার ক্ষেত্রে আপনার কী মত: অনেক সময় দেখা যায় স্বামী বা স্ত্রী যে কোন একজন সন্তান নেয়ার জন্য প্রস্তুত থাকে না বা সমস্যা থাকে। ধরুন স্বামী তার ব্যবসাকে প্রতিষ্ঠিত করে তারপর সন্তান নেয়ার পরিকল্পনা করে আবার স্ত্রী বাচ্চা নেয়ার মতো বয়সে পৌছায় নি। এমন হলে নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া করে নেয়া উচিত যে কতটা সময় পর বাচ্চা নিবেন।
- আমার সাথে আপনার সকল সুখ দুঃখ ভাগ করে নিবেন: এ প্রশ্ন টা খুবই স্বাভাবিক। নিজের সবকিছুই ভাগাভাগি করে নেয়ার নামই ভালোবাসা। জীবনে যাই ঘটুক না কেন আগে নিজের সঙ্গীকে শেয়ার করা উচিত। এতে নিজেদের মধ্যে কোন দূরত্ব থাকে না।
- আমাকে খুশি করতে কী করবেন: এ প্রশ্নের মাঝে জেনে নেয়ার চেষ্টা করবেন আপনার সঙ্গী আপনার জন্য কতটা ত্যাগ করতে পারবে। আপনার জীবন কে সুন্দর করে সাজিয়ে তুলতে সে কতটা উৎসুক তাও বুঝতে পারবেন এ কথা জিজ্ঞেস করার পর।
- আমার সকল চাওয়া পাওয়া পূরন করতে পারবেন: সঙ্গীর কাছে আপনি কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা বুঝতে এই প্রশ্ন টা করবেন।
- আপনার কাছে সবচেয়ে জরুরি কাজ কী: জীবন সঙ্গী কী করতে ভালোবাসে কী চায় না চায় তা জানতে এ প্রশ্ন টি করা উচিত।তার গুরুত্বপূর্ণ যেসকল কাজে তিনি কাউকে হস্তক্ষেপ করতে দেয় না তাও জেনে নিতে পারবেন।
- আপনার কাছে আমার প্রয়োজনীয়তা কতটুকু: জীবন সঙ্গী হিসেবে সঠিক মানুষ নির্বাচন করতে পারলে এই প্রশ্নের যথাযথ উত্তর নিশ্চয়ই পাবেন। কারন আপনি যদি তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকেন সে আপনাকে সম্মানের সাথে অনেক ভালোবাসা দিবে এবং আজীবন আগলে রাখবে।
বাসর রাতে কি কথা বলতে হয়
দুজন মানুষের মিলনের রাত হলো বাসর রাত। যেহেতু একজন নতুন মানুষ কে জীবন শুরুর প্রথম রাত এটি তাই তাকে নিয়ে জানার অনেক কিছু থাকে স্বামী বা স্ত্রী দুজনের মাঝেই।
বাসর ঘরে ঢোকার পর একজন স্বামী বাসার রাতে নিয়ম কানুন অনুযায়ী প্রথমেই তার স্ত্রী কে যে প্রশ্ন টা করতে পারেন তা হলো -
- আমার বাড়িতে আসতে আপনার কোন সমস্যা হয়নি তো?
- আপনি কী আমার সাথে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন?
- আমাকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করতে আপনার কোন দ্বিধা আছে কী?
- স্ত্রীর কিছু প্রশংসা করবেন যেমন - তোমাকে অপরূপ সুন্দর লাগছে, আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি, আমি সারাজীবন তোমাকে আমার কাছে আগলে রাখবো এক টুকরো হিরার ন্যায় ইত্যাদি।
- যতটা সম্ভব আপনার স্ত্রীর সাথে নিজেকে মানিয়ে নিবেন।সে খুশি হবে এমন সকল আচরণ করবেন। যেহেতু সে তার জন্মদাতা পিতা মাতাকে ছেড়ে আপনার কাছে এসেছে অবশ্যই তাকে সেই মর্যাদা দিবেন।
একজন স্ত্রী হিসেবে যে প্রশ্ন করবেন
একজন স্ত্রী হিসেবে বাসর রাতে আপনি আপনার স্বামীর সাথে যে কথাগুলো বলবেন তা হলো -
- আপনার স্বামীর সাথে মিষ্টি স্বরে কথা বলবেন। যতটা সম্ভব তাকে আপনার প্রতি আকৃষ্ট করতে চেষ্টা করবেন।
- আপনার স্বামীর প্রশংসা করবেন যেমন- আমি আপনার স্ত্রী হতে পেরে অনেক আনন্দিত এবং নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি ইত্যাদি।
বাসর রাতে কি কি করতে হবে
নতুন জীবনের সূচনাতে প্রথম রাতে সঙ্গীর সাথে করার মতো অনেক কিছু রয়েছে। প্রথমে কিছুক্ষণ তার সাথে কথাবার্তা বলবেন। একে অপরকে জেনে নিবেন। এরপর স্বামী স্ত্রী একে অপরের সাথে মিলন করবেন। অথবা যদি সরাদিনে সকল সামাজিক নিয়মনীতি পালন করে সঙ্গী কে ক্লান্ত দেখেন তবে বিশ্রাম নেওয়াটাই উত্তম।
বাসর ঘরের আমল ও সুন্নাহ
ইসলামে বাসর রাত নিয়ে কিছু আমল ও সুন্নাহ রয়েছে ও অনেক ধরনের বাসর রাতের নিয়ম কানুন রয়েছে। বাসর রাতে স্বামী তার স্ত্রীর সাথে কোমল আচরণ করবেন। স্ত্রীর মাথায় হাত রেখে দোয়া পড়বেন। তার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া চাইবেন। এরপর স্বামী স্ত্রী দুজনে একসাথে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করবেন। দুজনে মিলে একসাথে দোয়া চাইবেন নতুন জীবনের জন্য।
(اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَهَا وَخَيْرَ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا وَمِنْ شَرِّ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ) উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা খায়রহা ওয়া খাইরা মা জাবালতাহা আলাইহি, ওয়া আউজু বিকা মিন শাররিহা ওয়া মিন শাররি মা জাবালতাহা আলাইহি।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে তার কল্যাণটুকু এবং যে কল্যাণের ওপর তাকে সৃষ্টি করেছেন, অভ্যস্ত করেছেন সেটা প্রার্থনা করছি। আর তার অনিষ্ট থেকে ও যে অনিষ্টের ওপর তাকে সৃষ্টি করেছেন, অভ্যস্ত করেছেন তা থেকে আশ্রয় চাই। (সুনানে আবু দাউদ ২১৬০)
সকল বিপদ থেকে নিরাপদ থাকতে দোয়া চাইবেন আল্লাহর নিকট। একে অপরের নেক হায়াত চাইবেন।
এরপর স্বামী স্ত্রীর দুজনে একে অপরের হাতে চুমু খাবেন। তাছাড়া স্বামী তার স্ত্রীর কপালে চুমু দিবেন এটাও একটি সুন্নাহ।
আমাদের পরামর্শ
প্রিয় পাঠক ওপরে বাসর রাতের নিয়ম কানুন ভালোভাবে বিস্তারিত দেওয়া রয়েছে যেগুলো অবশ্যই আপনার পালন করা খুবই জরুরী। বিয়ে হচ্ছে স্বামী স্ত্রীর অফুরন্ত ভালবাসার একটি বাঁধন। তাই বিয়ে করে দুইজন দুইজনকে অফুরন্ত ভালোবাসুন। এবং দুজনাই দুজনে সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নিন। ভালোভাবে জীবন যাপন করুন সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url