টবে গাছ লাগানোর নিয়ম - মাটি তৈরি পদ্ধতির বিস্তারিত জানুন

প্রিয় পাঠক নিচে টবে গাছ লাগানোর নিয়ম - মাটি তৈরি পদ্ধতির বিস্তারিত জানুন।
টবে গাছ লাগানোর নিয়ম - মাটি তৈরি পদ্ধতির বিতারিত জানুন


এই আর্টিকেল পড়ার  মাধ্যমে টবে গাছ লাগানোর নিয়ম ও বিস্তারিত জানতে পারবেন। ও কখন গাছ লাগানোর উত্তম সময়, বা কি সার দিতে হবে, বা টবে কি ফুল গাছ লাগানো যায় নিচে জানানো রয়েছে।
সূচিপত্রঃ টবে গাছ লাগানো নিয়ম ও মাটি প্রস্তুত - সার পানি দেওয়ার নিয়ম,

টবে গাছ লাগানোর নিয়ম- মাটি তৈরি পদ্ধতির বিস্তারিত জানুন

আমরা যদি টবে গাছ লাগানোর নিয়ম ও মাটি র তৈরির পদ্ধতি না জানি। তবে আমারা যে চারা গাছটি রোপন করবো সেটি যদি আমরা ঠিক মত লাগাতে না পারি। তাহলে সেই গাছটি আর হবে না, ভুল করার কারণে সেই গাছটি মারা যাবে। আবার যদি আমরা মাটি তৈরিতে সমস্যা করি তবে একটু বড় হওয়ার পরে সেই গাছটি আর বড় হবে না।

এর জন্য মাটি প্রস্তুত করার জন্য আমাদের সার প্রয়োগ করা উচিত। এবং সারের সাথে আমাদের প্রাকৃতিক গোবর সার, পচা পাতা দিয়ে তৈরি পাউস। সরিষার খৈল এবং বালি দিয়ে বীজ দিয়ে চারা রোপন করতে হবে। তারপরে যখন সেই বীজ থেকে ছোট চারা গাছ জন্মাবে সেই চারা গাছটি ১৫ দিন থেকে এক মাস হলে সেই চারা গাছটি বড় টবে সরিয়ে নিতে হবে। 

যে কারণে ছোট টব টিতে চারদিকে শেকর ছড়িয়ে যেতে পারে এর জন্য আসতে করে সেখান থেকে তুলে নিয়ে বড় টবটাতে বসিয়ে দিতে হবে। এবং চারা গাছটি যেহেতু ছোট্ট এবং তার কাণ্ড গুলো খুব নরম থাকে। যে কারণে চারা টি বড় টবে হালকা করে বসিয়ে দিয়ে আস্তে আস্তে করে মাটি দিতে হবে। 

বড় টবে মাটি যতটুকু থাকবে সেখানে এক থেকে দুই ইঞ্চি মাটি গর্ত করে সেই চারা গাছটি আলতো ভাবে বসিয়ে দিতে হবে দিয়ে মাটি দিয়ে গাছের গোড়া ঢেকে দিতে হবে।

টবের গাছের জন্য মাটি তৈরি

গাছ লাগানোর জন্য সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মাটি প্রস্তুত করা। এজন্য আমাদের খুব গুরুত্ব সহকারে মাটি প্রস্তুত করতে হবে। মাটি প্রস্তুত ঠিক ভাবে না করলে গাছ বেড়ে উঠবে না। আবার গাছ মরে যেতে পারে। যে কারণে আমাদের মাটি প্রস্তুত অনেক ভালোভাবে করতে হবে। আমরা যেভাবে মাটি প্রস্তুত করতে পারি তা হল: 

একটি ভালো ও যোগ্য মানের মাটি প্রস্তুত করার জন্য আমাদের এর সাথে অনেক ধরনের সার মিশাতে হবে আবার ছাই মেশাতে হবে। সরিষার খৈল মেশাতে হবে, পটাশ, টবে গাছ লাগানোর জন্য বেলে ও দোআঁশ মাটি খুব উপকারী। যদি বেলে মাটি না পাওয়া যায় তবে দোআঁশ মাটির সঙ্গে বালু মিশাতে হবে। গোবর সার, বা পাওস , টিএসপি এগুলো সব একসাথে মিশাতে হবে। তবে এগুলো পরিমাণ মতো মিশাতে হবে । যেগুলো যতটুকু পরিমাণে নিবেন তা হল: 

আমি এইখানে ছয় বস্তা পরিমাণ এর মাপ দিয়ে দিচ্ছি। আপনি আপনার কতটুকু মাটির প্রয়োজন সে অনুযায়ী সবকিছু মিশিয়ে নিবেন। 
  • ছয় বস্তা মাটি এর সঙ্গে দুই বস্তা গোবর সার বা পাউস মিশাতে হবে। 
  • যদি আপনার কাছে পঁচা পাতা এর সার থাকে তবে আপনি সেই পাতা পচা সার এক বস্তা।
  • ২ কেজি কাঠ পুরানো ছাই দিতে হবে। এতে গাছ ভালো থাকে ও গাছের শক্তি বৃদ্ধি পায়। 
  • খৈল একদম অনেক গুরা গুরা করে নিতে হবে। একদম পাউডার এর মত। যেন সেটি অনেক সহজেই মাটির সাথে মিশে যায় । এবং এটি হাফ কেজি পরিমাণে নিতে হবে ছয় বস্তার জন্য। 
  • টিএসপি ২০০ গ্রাম নিতে হবে। 
  • পটাশ ২০০ গ্রাম নিতে হবে।
এগুলো মেশানোর জন্য আপনাকে বেলচা ব্যবহার করতে হবে। এবং বেলচা দিয়ে মাটি একই স্থান থেকে পাশের আরেক স্থানে রাখতে হবে। এবং আপনি যখনই বেলচা দিয়ে মাটি এক স্থান থেকে আরেক স্থানে রাখবেন সাথে সাথে যেখানে মাটির রাখছেন সেই মাটির উপরে হালকা হালকা করে পানি ছিটিয়ে দিতে হবে। 

এমন ভাবে প্রত্যেক বেলচা মাটি রাখার সাথে সাথেই সেই মাটির ওপরে পানি ছিটাতে হবে। এমন ভাবে বেলচা দিয়ে একই স্থান থেকে আরেক স্থানে মাটি রাখতে হবে ও তার ওপরে পানি ছিটিয়ে দিতে হবে। এটি কয়েকবার করার পরে। এক জায়গাতেই মাটি গুলো উঁচু করে ঢেকে রেখে দিতে হবে। পলিথিন দিয়ে যেন কোন মাটির অংশই ফাঁকা না থাকে। 

তারপরে এক দুই সপ্তাহ পরে পলিথিন থেকে মাটি গুলোকে বাহির করে আবার মিশে নিতে হবে বেলচা দিয়ে । তারপরে আবার পাঁচ থেকে ছয় দিন মাটি এগুলো খোলায় রেখে দিতে হবে । এভাবেই হয়ে যাবে টবের মাটি প্রস্তুত।

টবে কি কি গাছ লাগানো যায়?

টবে মধ্যে নানা ধরনের গাছ লাগানো যায়। আমাদের যাদের ছাদ বাগান করার অনেক শখ তারাই মূলত টবে গাছ লাগাই। আপনি ছাদ বাগান করতে পারবেন টবে গাছ লাগানোর মাধ্যমে। আবার আপনি ছাদ বাদেও টবের মধ্যে অন্য যেকোনো জায়গাতে গাছ লাগাতে পারবেন।

আপনার বাসার মধ্যে যদি অল্প পরিমাণ ও জায়গা থাকে তবে আপনি ফুল ও ফলের গাছ লাগাতে পারবেন। ফল ফুল এর গাছের সব সময় যত্ন নেওয়া লাগেনা। আপনি যদি একটু অলস টাইপের হয়ে থাকেন তবে আপনার জন্য ফুল এর ছোট একটি বাগান সামলাতে কোন সমস্যা হবে না।

কেননা ফুল ও ফল এর গাছ টবে লাগালে বেশি যত্ন না নিলেও হয়। এর জন্য আপনি যে সব ফুল ও ফলের গাছ টবে লাগাইতে পারবেন তা হলো 
যেসব ফল গাছ টবে লাগাতে পারেন:
  • আম গাছ : ছোট প্রজাতির আম গাছ যেটি বারো মাস আম দেই এবং গাছটি বড় হলেও বেশি বড় না হয়ে ছোট হয়। এটির জন্য টপ বা একটু টবের থেকে বড় ধরনের ড্রাম এর মত জায়গার প্রয়োজন। 
  • ড্রাগন গাছ : যদি আপনি অনেক দীর্ঘ সময়ের জন্য ড্রাগনের গাছ ছাদ বাগান করতে চান। তবে আপনার টবে না লাগানো উচিত। এর জন্য আপনি বড় ধরনের ড্রাম কিনে এনে তারা অর্ধেক করে কেটে লাগাতে পারেন।
  • আঙ্গুর গাছ: আঙ্গুর গাছ আপনি টবে লাগাতে পারেন। তবে যদি একের অধিক আঙ্গুর গাছ একটি টবে রাখতে চান তবে আপনাকে একটু বড় ধরনের টবে আঙ্গুর গাছ লাগাতে হবে। নয়তো বা আপনি ড্রাম অর্ধেক করে কেটে তার মধ্যে গাছ লাগাতে পারেন।
  • কামরাঙ্গা গাছ : একটি কামরাঙ্গা গাছ আপনি ছাদের ওপরে একটি টবের মধ্যে লাগাতে পারেন। তবে সেই কামরাঙ্গা গাছটি ছোট প্রজাতির হতে হবে। যেটি বড় হয়না তবে কামরাঙ্গা দেই কম সময়ে। 
  • কমলা গাছ: একটু বড় টবে হলেই কমলার গাছ হয়ে যায়। এর জন্য বড় টাইপের টবে কমলার গাছ চাষ করা যাবে। ইত্যাদি আরো ফলের গাছ টবে চাষ করা যায়। 
যেসব ফুল গাছ টবে লাগানো যায় 
বাড়িঘর কিংবা ছাদ বাগান সুন্দর। বানানোর জন্য ফুল এর ছোট ছাদবাগান কিংবা ছোট ফুল বাগান। বা আপনি আপনার বারান্দার গ্রিলের সাথে ফুলের গাছ বোতলে করে লাগাইতে পারবেন। এতে করে আপনার ঘরবাড়ি কিংবা বারান্দা অনেক সুন্দর দেখা যাবে। ফুল গাছগুলো হল:
  • গোলাপ 🌹 গাছ : ছাদ বাগানে যদি আপনি ফুল গাছ লাগান তবে যদি আপনার ছাদ বাগানে  ফুল গাছের মধ্যে গোলাপ না থাকে তবে ছাদ বাগানের সৌন্দর্যই থাকবে না। এর জন্য ছাদ হোক কিংবা বারান্দা গোলাপ গাছ আপনি টবের মধ্যে লাগাতে পারবেন। তবে গোলাপ গাছটি ছোট প্রজাতির হলে ভালো হয়। 
  • বেলি ফুল গাছ: বাড়িঘর সুগন্ধময় রাখার জন্য বেলি ফুল এর গাছ লাগানো অনেক ভালো। এটি আপনার বাড়ি সবসময় সুগন্ধময় রাখবে। বেলি ফুলের গাছ আপনি টবে লাগাতে পারবেন। 
  • গাঁদা ফুল গাছ: গাঁদা ফুলের গাছ টবের মধ্যে আপনি বারান্দায় কিংবা ছাদে সব জায়গাতেই লাগাতে পারবেন।
এছাড়া আপনি আপনার পছন্দমত অনেক গাছে লাগাইতে পারেন আপনার বারান্দায় কিংবা ছাদ বাগানে। তবে আপনি যদি আমার পছন্দ মত গাছ লাগাতে চান তবে আমি আপনাকে কিছু গাছের পরামর্শ দিতে পারি। যে সকল গাছ লাগানোর মাধ্যমে আপনার বারান্দা কিংবা ছাদ বাগান কিংবা যে অন্য জায়গাতে লাগাতে চান আপনি সেই বাগানটির সৌন্দর্য বাড়বে এসব ফুল গাছ লাগালে। তাহলো :
  • কাঠ গোলাপ।
  • কলাবতী।
  • টাইম ফুল। 
  • সূর্যমুখী 🌻। 
  • সন্ধ্যা মনি। 
  • রঙ্গন। 
  • নয়ন তারা। 
  • দোলনচাঁপা ইত্যাদি। 
এই সকল গাছ বেশি যত্ন না নিলেও মারা যায় না। যে কারণে আপনি অল্প যত্ন নেয়ার মাধ্যমেই এ সকল গাছ বড় করে ফুল ফোটাতে পারবেন।

গাছ লাগানোর উত্তম সময় কখন?

গাছ লাগানোর জন্য আমাদের একটি উত্তম সময় বেছে নেওয়া উচিত। আমরা যখন সময় নির্ধারণ করে গাছ রোপন করব। তখন আমাদের গাছটি সঠিক সময় লাগানোর কারণে সব দিক দিয়ে ভালো হয়ে জন্মাবে। আমরা যদি জুন থেকে অক্টোবর মাসের মধ্যে গাছের চারা রোপন করি তাহলে সেটি অনেক ভাল হবে। কেননা জুন থেকে অক্টোবর বা নভেম্বর মাস পর্যন্ত বৃষ্টি হয়। 

তারপরে শীতের আবহাওয়া চলে আসে। যে কারণে বর্ষার মধ্যে আমরা যদি চারা রোপন করি তবে আমাদের পানির কোন কমতি থাকবেনা ও আলো বাতাস ঠিকমতো পাওয়া যাবে সুন্দরভাবে। এবং আমরা যে ফল কিংবা ফুল রোপন করবো বর্ষার মধ্যে সেগুলো বেশিরভাগ ফুল বা ফলই আমরা শীতের মৌসুমে পাব। 
এবং আমরা বিকেল এর সময় চারা রোপন করবো যখন সূর্য ডুবে যাবে এমন সময়ে চারা রোপন করা উচিত।

গাছে পানি দেওয়ার উপযুক্ত সময় কোনটি?

পানি দেয়ার নিয়ম না জানলে গাছের মধ্যে অনেক ধরনের রোগ দেখা দিবে। যে কারণে গাছে পানি দেওয়া আমাদের জানা খুবই প্রয়োজন। আমরা যদি রাতে গাছে পানি দেই সে কারণে গাছের গোড়ায় ও পাতাতে পানি জমে থাকবে ও তা থেকে পচন এর মত রোগ হতে পারে। যে কারণে আমাদের বিকেলের শেষ মুহূর্তে গাছে পানি দেওয়া খুবই উপকারী। 

আপনি যখন অতিরিক্ত রোদের মধ্যে গাছে পানি দেবেন তখন সেটি গাছের জন্য অনেক ক্ষতিকারক। সে কারণে সূর্য যখন  সূর্য যখন ঢুকতে শুরু করবে তখন গাছে পানি দেওয়া অনেক উপকারী। এবং আপনি যদি গাছের গোড়ায় সরাসরি পানি দেন তবে সেই গাছটি মারা যাবে। যে কারণে গাছের গোড়ায় সরাসরি পানি দেওয়া উচিত নয়। 

আপনার গাছের মাটি যতদিন পর্যন্ত না শুকনো হবে ততদিন এর আগ পর্যন্ত পানি দেওয়ার প্রয়োজন তেমনি হয় না। মাটি হালকা শুকনো হয়ে গেলে আপনি পানি দিতে পারবেন তবে ভিজা থাকা অবস্থায় পানি দেওয়া উচিত নয়।

টবের আগাছা পরিষ্কার

আপনার টবের মধ্যে যদি আগাছা জন্মায় তবে সেটি অবশ্যই পরিষ্কার করা উচিত। কেননা আপনি যদি সার প্রয়োগ করেন আপনার চারা গাছে। তাহলে সেই আগাছা গুলো সেই সার এর পুষ্টিগুণ খেয়ে নিবে। যে কারণে আপনার  গাছটি সঠিক পুষ্টি পাবে না। আপনি নিরানি দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করুন।

টবের মাটিতে প্রতি মাসে কত বার সার দিতে হয়?

আমরা যদি টবের মধ্যে সার দেই তবে এমন পরিমাণে পানি দেওয়া উচিত যে পানি দুই থেকে চার দিন পর্যন্ত যেন ভেজা থাকে। এমনটা যদি আমরা করি তবে আমাদের যে সার আমরা প্রয়োগ করব সেই স্যারের পুষ্টি গুলো আমাদের টবের মাটিতে অনেক ভালোভাবে মিশে যাবে। আমরা টবে ইউরিয়া বা অন্যান্য সার দিতে পারি ১৫ থেকে ২০ দিন পর পর। 

আমাদের পরামর্শ 

গাছ লাগানোর মাধ্যমে আমাদের পরিবেশ ভালো থাকে। যে কারণে আমাদের শ্লোগান হচ্ছে গাছ লাগান পরিবেশ বাঁচান। আমরা যদি ছোট করেও ছাদ বাগান কিংবা বারান্দা বাগান করি। তাহলেও আমাদের গাছ লাগানোর জন্য আমাদের পরিবেশ ভালো থাকবে। এর জন্য বেশি বেশি করে গাছ লাগাই। সুস্থ থাকি, ভালো থাকি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url