মাছ চাষের আধুনিক পদ্ধতি কি? - লাভবান হওয়ার ৯ টি উপায় ও বিস্তারিত
প্রিয় পাঠক মাছ চাষ করে লাভবান হওয়ার জন্য মাছ চাষের আধুনিক পদ্ধতি কি? - লাভবান হওয়ার ৯ টি উপায় ও বিস্তারিত আমাদের জানতে হবে।
সূচিপত্রঃ আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ ও লাভবান হওয়ার উপায়,
মাছ চাষের আধুনিক পদ্ধতি কি? - লাভবান হওয়ার ৯ টি উপায় ও বিস্তারিত
এখনকার এই আধুনিক দুনিয়ায় আমরা যদি কৃষি ক্ষেত্রেও আধুনিক হয়ে থাকি তাহলে আমরা খুব সহজেই এতে লাভ করতে পারব। আধুনিক ভাবে মাছ চাষ করার জন্য আমাদের সর্বপ্রথম পুকুর অনুযায়ী যে মাছে বেশি লাভ সেই মাছ ছাড়া চিন্তা করতে হবে। এবং যে মাছ খুব একটি বেশি মারা যায় না সেই প্রজাতির মাছ আমাদের চাষ করতে হবে।
আধুনিক ভাবে মাছ চাষ করে লাভবান হওয়ার জন্য যা যা করতে পারি:
- সর্বপ্রথম আমাদের সঠিক একটি পুকুর নির্বাচন করতে হবে। যে পুকুরে সব সময় পানি থাকে এমন ধরনের পুকুর আমাদের নির্বাচন করতে হবে।
- মাছ ছাড়ার আগে আমাদের যথাযথ ভাবে পুকুর প্রস্তুত করে নিতে হবে।
- আমরা কোন প্রজাতির মাছ সেই পুকুরে চাষ করব আগে সেই মাছটি নির্বাচন করে নিতে হবে। সেটি যেন লাভজনক হয় এবং রোগে আক্রান্ত না হয় এমন ধরনের মাছ নির্বাচন করতে হবে।
- প্রতি শতকে পোনা বা বড় মাছ ছাড়ার সঠিক সংখ্যা নির্বাচন করতে হবে।
- আমরা যদি মিশ্র মাছ চাষ করি তাহলে আমাদের মিশ্র মাছ এর চাষের ক্ষেত্রে মাছের জাত নির্বাচন করতে পারদর্শী হতে হবে।
- মাছ ছাড়ার আগে পুকুরের পানির গুণগত মান ঠিক রাখতে হবে।
- মাছ চাষের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হল খাবার দেওয়া এর জন্য আমাদের ভালো পরিমাণে খাবার দিতে হবে।
- মাছের ওজন কমলো না বাড়ল সেটি চে এরক করতে হবে।
- পুকুরের মধ্যে বেশি পরিমাণে সার বিষ দেওয়া থেকে দূরে থাকতে হবে।
প্রিয় পাঠক এতক্ষণ আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করা ও নয়টি উপায়ে জানানো হয়েছে। নিচে আরও বিস্তারিত দেওয়া রয়েছে মাছ চাষে লাভবান হওয়ার। এবং কি ধরনের মাছ চাষ করবেন বা পুকুর প্রস্তুত করার নিয়ম ও মা ছাড়া নিয়ম সবকিছু বিস্তারিত নিচে দেওয়া রয়েছে।
শতক প্রতি মাছ ছাড়ার নিয়ম
মাছ চাষ করার জন্য আমাদের এটি জানা খুবই প্রয়োজন যে কতটুকু পুকুরের মধ্যে কতটুকু মাছ ছাড়া যেতে পারে। আমরা যদি একটি পুকুরের জায়গা অবস্থায় মাছ বেশি ছেড়ে ফেলি তাহলে সেই পুকুর টিতে আমরা কখনোই লাভ করতে পারব না, এতে আমাদের খুবই ক্ষতি হয়ে উঠবে। এর জন্য আমাদের খুবই গুরুত্বর সাথে জানা প্রয়োজন যে কত শতকে কতটুকু মাছ ছাড়া প্রয়োজন। প্রতি শতকে আমরা যেভাবে মাছ ছাড়তে পারি:মিশ্র মাছ
- কাতলা : ১০০% এর মধ্যে ২০ % =১০ টি।
- রুই : ১০০ পার্সেন্ট এর মধ্যে ৪০%=৪০ টি।
- মৃগেল : ১০০% এর মধ্যে ২০ %=২০ টি।
- সিলভার কাপ : ১০০ % এর মধ্যে ১০%=৫ টি।
- গ্রাস কাপ : ১০০% এর মধ্যে ১০%= ৫ টি।
পেটি মাছ চাষ বা ছোট মাছ চাষ
- মোলা: মোলা মাছ আপনি প্রতি শতকে ১৫০ টি থেকে ২০০ মোলা মাছ চাষ করতে পারেন।
- টেংরা: টেংরা মাছ প্রত্যেক শতকে ১০০ থেকে ১২০টির মতো মাছ ছেড়ে ছেটে চাষ করতে পারেন।
- পুঁটি : পুটি মাছের চাহিদা অনেকটাই বেশি এর জন্য পুঁটি মাছ আমাদের পুকুরে চাষ করার জন্য অনেক সাবধানতার সাথে চাষ করতে হবে পুঁটি করতে পারেন 200 থেকে 250 টি।
একটি পুকুরে এক প্রজাতি এর মাছ চাষ করা
- রুই : একটি পুকুরের মধ্যে রুই মাছ প্রত্যেক শতকের ছাড়া যেতে পারে ২০ থেকে ৩০ টি। পুকুর যদি খারাপ হয় তাহলে এর সংখ্যা একটু কমানো যেতে পারে।
- কাতলা: এককভাবে একটি পুকুরে কাতলা চাষ করার জন্য মাছ একটু কম ছাড়তে হয়। এর জন্য প্রত্যেক শতক পুকুরে ১৫ থেকে ২০ টি কাতলা মাছ ছাড়া যেতে পারে।
- মৃগেল: রুই মাছের মতোই মৃগেল মাছ ও প্রত্যেক শতকে ২০ থেকে ২৫ টি কিংবা ৩০ টি ও ছাড়া যেতে পারে যদি পুকুর ভালো হয়ে থাকে।
- সিলভার কাপ: সিলভার কাপ প্রতি শতকের রুই ও মৃগেল এর চেয়ে বেশি ছাড়া যেতে পারে। প্রত্যেক শতক পুকুরে ২৫ থেকে ৩০ টির মত সিলভার কাপ মাছ ছাড়া যেতে পারে। যদি পুকুর ভালো হয় তাহলে এর একটু বেশি ছাড়া যেতে পারে।
- গ্রাস কাপ: গ্রাস কাপ মাছ ছাড়ার ক্ষেত্রে আমাদের প্রত্যেক শতকে খুব সতর্কভাবে মাছ ছাড়তে হবে কারণ এটি প্রত্যেক শতকে কম করে ছাড়তে হয়। এর জন্য আমরা ১০ থেকে ১৫ টি গ্রাস কাপ ছাড়তে পারি।
- তেলাপিয়া: তেলাপিয়া মাছের ক্ষেত্রে আমরা প্রতি শতক পুকুরে বেশি করে ছাড়তে পারি। কারণ তেলাপিয়া মাছ একটু ছোট প্রজাতির হয়ে থাকে এর জন্য আমরা ১০০ থেকে ১১০টি মাছও ছাড়তে পারি। যদি পুকুরের অবস্থা খারাপ হয় তাহলে এর একটু কম করতে পারি।
- পাঙ্গাশ: প্রতি শতকে পাঙ্গাস মাছ আমরা ৪০ থেকে ৫০ টি ছাড়তে পারি।
ছোট পুকুরে মাছ চাষ
আমাদের অর্থনীতিতে অনেকটাই বড় অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে মৎস্য খাত। এটি আমাদের অর্থনীতি উন্নতি করতে অনেকটাই সাহায্য করে আসছে। এর মধ্যে অন্যতম মাধ্যম হলো ছোট পুকুরে মাছ চাষ করা। ছোট পুকুরে মাছ চাষ করার মাধ্যমে যেমন আমাদের অনেক বেশি লাভ হয় আবার এতে আমাদের দেশের খাদ্য সংকট দূর হয়।
আমাদের দেশে প্রায় ছোট পুকুরে মাছ চাষ করে অনেকেই লাভবান হয়ে উঠছে। এবং এর পাশাপাশি দেশের মানুষের মিলছে প্রোটিন। ছোট পুকুরের মাছের চাহিদা আমাদের দেশে অনেকটাই বেশি। এর জন্য আমরা ছোট পুকুরে মাছ চাষ করতে পারি।
ছোট পুকুরে মাছ চাষের সুবিধা
- বিনিয়োগ: আমরা যখন ছোট পুকুরে মাছ চাষ করি তখন আমাদের খরচটা অনেকটা কম হয়। কেননা বড় পুকুরে অনেক বেশি খরচ হয় এতে ছোট ছোট চাষিরা কখনোই এমনভাবে বড় পুকুরে মাছ করতে পারবেনা। তাই ছোট পুকুরে মাছ চাষ করার মাধ্যমে ছোট ছোট কৃষকরা লাভবান হয়।
- পুকুর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা: আমরা যখন ছোট পুকুরে মাছ চাষ করবো তখন আমাদের পুকুরের স্বাস্থ্যও বুঝতে সাহায্য হবে। আমরা সহজেই বুঝতে পারবো পুকুরের মধ্যে কোন ধরনের সমস্যা রয়েছে কিনা।
- ইনকাম ব্যবস্থা: আমরা ছোট পুকুর করার মাধ্যম নিয়ে বাইরের অন্য কোন কাজ করার মধ্যে দিয়েও আমরা ছোট পুকুর সামলিয়ে রাখতে পারবো এতে আমাদের পরিবারের বাড়তি একটি ইনকাম হবে।
- প্রোটিন: আমরা যখন ছোট পুকুরে মাছ চাষ করব তখন আমরা এটি বিক্রি করতে পারব এবং আমাদের পরিবারের সকলের প্রোটিন এর ব্যবস্থা করতে পারবো।
মাছ চাষের জন্য পুকুর প্রস্তুতি
মাছ চাষ করে লাভবান হতে হলে আমাদের ভালোভাবে জানতে হবে পুকুর প্রস্তুত করা। আমরা যদি ভালোভাবে পুকুর প্রস্তুত করতে না পারি, তাহলে আমরা মাছ চাষ করে লাভবান হতে পারব না। আর যদি ভালোভাবে পুকুর প্রস্তুত না করতে পারি তাহলে আমাদের মাছ মারা যাবে এবং আমরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়বো। এর জন্য আমাদের পুকুর প্রস্তুত করতে জানতে হবে। যেভাবে পুকুর প্রস্তুত করব :
- আগাছা পরিষ্কার: আমাদের পুকুরের চারপাশের যে আগাছা গুলো থাকে সেগুলো আমাদের পরিষ্কার করতে হবে। যেমন: কচুরি পানা, হেলেঞ্চা, গাছের শিকড় সবকিছু পরিষ্কার করতে হবে।
- পানি পরিষ্কার: প্রত্যেকবার মাছ ছাড়ার আগে আমাদের পুকুরের পানি পরিষ্কার করতে হবে। এর জন্য আমরা ব্যবহার করতে পারি চুন। প্রত্যেক শতকে এক কেজি করে চুন দিতে হবে। আমাদের প্রথমে চুন টি অন্য একটি বালতি কিংবা ড্রামের মধ্যে গুলিয়ে রাখতে হবে। তারপর সেটি যখন ঠান্ডা হয়ে যাবে তখন পুরো পুকুর জুড়ে সেই চুন টি ছিটিয়ে দিতে হবে।
- রাক্ষসী মাছ: আমাদের পুকুরে যদি রাক্ষসী মাছ থাকে তাহলে আমরা কখনোই সেই পুকুর থেকে ছোট মাছ চাষ করে লাভবান হতে পারব না। এর জন্য আমাদের সেই পুকুর থেকে রাক্ষসের মাছ সরিয়ে ফেলতে হবে। যেমন সোল, বোয়াল, টাকি, ঢেলা, চান্দা, পুঁটি এমন মাছ সরিয়ে ফেলতে হবে।
- সার প্রয়োগ: মাছ ছাড়ার এক সপ্তাহ পরে আমাদের পানির ও পুকুরের গুণগত মান পরীক্ষা করে সেই অনুযায়ী সার দিতে হবে।
- কীটপতঙ্গ: আমাদের পুকুরে যদি কীটপতঙ্গ থাকে তাহলে সেটি আমাদের মাছকে মেরে ফেলবে এর জন্য ছোট মাছ পুকুরে ছাড়ার আগে আমাদের পুকুরের কীটপতঙ্গ দূর করতে হবে আগে।
কার্প জাতীয় মাছের মিশ্র চাষ
মিশ্র মাছ চাষ করার ক্ষেত্রে আমাদের জানতে হবে মাছ ছাড়ার পদ্ধতি। কেননা মিশ্র মাছ চাষ করা একটু কঠিন হয়ে দাঁড়ায় যদি আমরা মাছ নির্বাচন না করতে পারি। কেননা পুকুরের মধ্যে তিনটি স্তর রয়েছে ওপরের স্তর, মধ্যস্তর ও একদম নিচের স্তর। মিশ্র মাছ চাষের ক্ষেত্রে আমাদের তিন স্তরেই জেনে কতটুকু মাচ লাগবে সে অনুযায়ী মাছ ছাড়তে হবে।
আমরা যদি এক স্তরে বেশি মাছ ছাড়ে তাহলে আমরা সেই পুকুর থেকে লাভবান হতে পারব না।
কেননা আমরা যখন একই স্তরে বেশি মাছ দেব তখনি তারা প্রতিযোগিতা শুরু করে দিবে। তখন মাছ মরে যাওয়ার সম্ভাবনাও বেশি থাকে এর জন্য আমাদের সমানভাবে তিনটি স্তরের মাছ মিশ্র ভাবে চাষ করা প্রয়োজন।
এর জন্য আমরা একই স্তরে মাছ বেশি ছাড়তে পারবো না এতে আমাদের এই ক্ষতি হবে। এর জন্য প্রত্যেক শতকে আমাদের মিশ্র মাস ৫০ থেকে ৬০ টি ছাড়তে হবে। এবং এই ৫০ থেকে ৬০ টি মাঝে আমাদের তিন স্তরের মাছ নিয়ে ছাড়তে হবে।
কোন মাছ চাষে লাভ বেশি
আমরা যদি সঠিক নিয়মে মাছ চাষ করি তাহলে আমরা বেশিরভাগ মাছ থেকেই লাভবান হতে পারব। আর আমরা যদি মাছ চাষ ও সঠিক নিয়মে বিক্রি করতে পারি তাহলে এর থেকে আমরা অনেক বেশি লাভবান হবো। এর জন্য আমাদের জানতে হবে মাছ বিক্রয়ের কৌশল ও সঠিক সময়ে বিক্রয় করা।
এবং আমরা গলদা চিংড়ি, কাপ জাতীয় মাছ, তেলাপিয়া, পাঙ্গাস এমন ধরনের মাছ চাষ করে লাভবান হতে পারবি। এখন এইসব মাছ চাষ করে বেশিরভাগ কৃষকেরা লাভবান হচ্ছেন। তবে মাছ চাষে লাভবান হওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের প্রয়োজন প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও উন্নত প্রযুক্তি ও মাছ চাষের টেকনিক।
আমাদের পরামর্শ
মাছ চাষ করে আমাদের বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা আমরা উন্নতি করতে পারব। যে কারণে আমরা ছোট ছোট কিংবা বড় বড় পুকুরে মাছ চাষ করে লাভবান হতে পারব এবং আমাদের দেশের অর্থনীতি ব্যবস্থা ভালো করতে পারব। এবং আমাদের দেশের মানুষের প্রোটিন এর যোগান দিতে পারব। এর জন্য মাছ চাষ করে লাভবান আর প্রোটিন খায় সুস্থ থাকি, ভালো থাকি।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url