শ্বাসকষ্টের লক্ষণ ও প্রতিরোধের ৬ টি উপায় ও খাদ্য তালিকা - ওষুধের বিস্তারিত
প্রিয় পাঠক নিচে শ্বাসকষ্টের লক্ষণ ও প্রতিরোধের ৬ টি উপায় ও খাদ্য তালিকা - ওষুধের বিস্তারিত জানানো হয়েছে।
আমরা আজকে আপনাকে জানাবো যে শ্বাসকষ্ট কি? এর লক্ষণ কি? শ্বাসকষ্ট হলে আপনি কিভাবে এর থেকে মুক্তি পাবে? বা কি ওষুধ খাওয়া দরকার এই বিষয়ে আজকে আমরা আপনাকে জানাবো।
সূচিপত্রঃ শ্বাসকষ্টের লক্ষণ ও প্রতিরোধের উপায় ও খাদ্য তালিকা - ওষুধ,
শ্বাসকষ্টের লক্ষণগুলো
শ্বাসকষ্ট কি? তা জানার আগে এর লক্ষণগুলো জানা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আমাদের মধ্যে কিছু লক্ষণ দেখে আমরা বুঝতে পারবো, যে আমাদের শ্বাসকষ্ট আছে কি নাই। এর জন্য আমাদের নিজের প্রতি শ্বাস নেবার সময় কিছু কিছুটা খেয়াল করতে হবে।
যে আমাদের মধ্যে এই কারণগুলো আছে কিনা। এই কারণগুলো যদি থাকে তাহলে বুঝতে হবে, যে আমাদের মধ্যে শ্বাসকষ্ট রয়েছে শ্বাসকষ্টের কিছু সাধারন কারণ গুলো হলো:
- আপনি যখন শ্বাস নিবেন তখন যদি আপনার শ্বাস নেবার সময় যদি অনেক শব্দ হয়। তাহলে বুঝবেন যে আপনার শ্বাসকষ্ট রয়েছে।
- আপনার যদি শ্বাসকষ্ট থাকে তাহলে আপনার শ্বাস নেওয়ার সময় আপনার বুকের ছাতি বা বুকের যে অংশ থাকে। সেই অংশ অনেক টান টান অনুভব হবে। মনে হবে যে বুকটা ফুলে যাচ্ছে শ্বাস নেওয়ার সময়।
- যখন শ্বাসকষ্ট হয় তখন শ্বাস প্রশ্বাসের গতি অনেক দ্রুত হয়ে যায়। একটি সাধারন মানুষের থেকে একজন শ্বাসকষ্ট রোগী অনেক দ্রুত শ্বাস প্রশ্বাস নেই শ্বাসকষ্টের সময়।
- আপনার যখন শ্বাসকষ্ট অনুভব হবে তখন দেখবেন যে আপনার হার্টবিট এর গতি অনেক বেড়ে গেছে বা আপনার বুক ধরফর করছে। হার্টবিট অনেক স্পিডে লাফাচ্ছে এবং আপনি ঠিকমতো শ্বাস নিতে পারছেন না. এটি শ্বাসকষ্টের সময় হয়।
- শ্বাসকষ্টের সময় একটি শ্বাস নিতে মনে হয় আপনি অনেক পরিশ্রম করছেন কিন্তু সত্যিই আপনি যখন শ্বাস নিতে যাবেন। যদি আপনার শ্বাসকষ্ট হয় তাহলে আপনার মনে হবে আপনি অনেক পরিশ্রম করছেন, একটি শ্বাস নেওয়ার জন্য। এমন সময় একটি শ্বাস নেওয়ার পরে আরেকটি শ্বাস নেওয়ার জন্য মনে হবে আপনার খুবই দরকার আর একটি শ্বাস নেওয়ার। তবে সেই শ্বাস টি নেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক পরিশ্রম করতে হবে।
হার্টের রোগীর শ্বাসকষ্ট হলে করণীয়
শ্বাসকষ্ট এমনিতেই একটি মারাত্মক রোগ। তবে যদি একজন শ্বাসকষ্ট রোগীর হার্টের সমস্যা থাকে তাহলে সেটি আরো খারাপ ভাবে দেখা যায়। কেননা একজন হার্টের রোগীর যদি শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে প্রথমে তাকে কাছের কোন হাসপাতালে নিতে হবে।
আরো পড়ুন কিডনি ও লিভার ভালো রাখার ৬ টি উপায় ও ৬ টি খাদ্য তালিকার বিস্তারিত
এবং হাসপাতালে পৌঁছানো সাথে সাথেই তাকে অক্সিজেন দিতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী তাকে কিছু ওষুধ পত্র খাওয়াতে হবে। এটা বুঝতে হবে যে ওই রোগীর হার্ট অ্যাটাক হয়েছে কিনা এবং এর সময় সব থেকে ভালো উপায় হলো এনজিওগ্রাম করে হাটের ব্লক খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করা।
শ্বাসকষ্ট প্রতিরোধের উপায়
শ্বাসকষ্ট কি ইতিমধ্যেই আমরা জেনে গেছি। শ্বাসকষ্ট দূর করতে হলে ঘরোয়া ভাবে আমরা কিছু খাবার খাওয়ার মাধ্যমে আমরা শ্বাসকষ্ট দূর করতে পারি। এতে করে আমাদের খেতে হবে:
- পেঁয়াজ: পেঁয়াজ হল একটি খুবই উপকারী খাদ্য। মসলার মধ্যে পেঁয়াজ খাওয়ার মাধ্যমে আমাদের শরীরে প্রদাহ জনিত যেকোনো রোগ ঠিক হয়ে যেতে পারে। এর জন্য শ্বাসকষ্ট দূর করার জন্য কাটা পেঁয়াজ খেতে পারেন।
- লেবু: লেবু খাওয়ার মাধ্যমে আমাদের শরীরের মধ্যে ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রবেশ করে। এর জন্য প্রত্যেকদিন আমাদের এক গ্লাস পানির মধ্যে একটি লেবুর রস করে দিয়ে চিনি দিয়ে রোজ খাওয়ার মাধ্যমে শ্বাসকষ্ট কম হতে পারে।
- মধু: মধু খাওয়ার মাধ্যমে আমাদের সর্দি-কাশি এবং অন্যান্য সমস্যা দূর হয়ে যায় এবং শ্বাসকষ্টে সমস্যার জন্য মধুর অনেক আগে থেকেই ব্যবহার হয়ে আসছে। এর জন্য প্রত্যেকদিন রাতে আমাদের মধু খেয়ে ঘুমানোর ফলে শ্বাসকষ্ট কম হতে পারে।
- আদা: আদা চায়ের মধ্যে করে আমরা অনেকেই খাই। একটি টুকরা আদা যদি আমরা গরম পানির মধ্যে দেওয়ার পরে একটু ফুটিয়ে নিন । তারপরে যদি আমরা সেই পানি পান করি তাহলে শুধু শ্বাসকষ্টই নয় অনেক রোগী ঠিক হয়ে যাবে। এই আধা পানি খাওয়ার মাধ্যমে।
- রসুন: এক গ্লাস গরম দুধের মধ্যে দুই তিন কোয়া রসুন ফেলে দিয়ে আবার ফুটিয়ে নিন। এটি প্রত্যেক দিন পান করার মাধ্যমে ফুসফুসের যে কোন সমস্যা ঠিক হয়ে যাবে এবং শ্বাসকষ্ট ঠিক হয়ে যেতে পারে।
- কফি: এক কাপ গরমে কফি খাওয়ার মাধ্যমে শ্বাসকষ্টের যে প্রদাহ থাকে সেটি দূর করে দেয়। এর জন্য শ্বাসকষ্ট প্রতিরোধ করতে প্রত্যেকদিন এক কাপ কফি খাওয়া প্রয়োজন।
শ্বাসকষ্ট হলে কি খেলে ভালো হয়
- লেবুর শরবত প্রত্যেকদিন সকালে উঠে বানিয়ে খাওয়ার ফলে শ্বাসকষ্ট হওয়ার ঝুঁকি কমে।
- শ্বাসকষ্টের সময় বা শ্বাসকষ্ট যদি থাকে তাহলে আপনি স্ট্রবেরি মত ফল খেতে পারেন। বা ব্লুবেরি এমন ধরনের ফল খাওয়ার মাধ্যমে আপনার ফুসফুস ঠিক থাকবে ও শ্বাসকষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে। কেননা এই ফলগুলোর মধ্যে থাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।
- পালং শাক রান্না করে কিংবা স্মুদি বানিয়ে খাওয়ার মাধ্যমে ফুসফুস ভালো থাকে ও শ্বাসকষ্টের সমস্যা থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করে।
- সবজির স্যুপ খাওয়ার মাধ্যমে একটি আলাদা ধরনের শ্বাসকষ্টের সাথে লড়াই করে। আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখে সবজি স্যুপ এর জন্য। আপনি ধনেপাতা, গাজর, পেঁয়াজ, রসুন দিয়ে স্যুপ বানিয়ে খেতে পারেন। কিংবা সকালের খাবার হিসেবে আপনি স্যুপ খেতে পারেন।
শ্বাসকষ্ট হলে কি ঔষধ খেতে হবে
শ্বাসকষ্ট কি? কোন লক্ষণের কারণে শ্বাসকষ্ট হয়েছে? এইগুলো জানার পরে সেই অনুযায়ী ওষুধ খেতে হয়। শ্বাসকষ্টের সময় সাথে সাথে আপনি শ্বাসকষ্ট নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার জন্য কয়েক ধরনের ওষুধ আপনার ইনহেলার এর মধ্যে ব্যবহার করতে পারেন। সেই ওষুধগুলো হলো:
- Salbutamol.
- Salmeterol.
- Formoterol.
সাধারণত এই ওষুধগুলো ব্যবহারের মাধ্যমে শ্বাসকষ্ট নিয়ন্ত্রনে চলে আসে।
শ্বাসকষ্ট হলে করণীয় ব্যায়াম
ব্যায়াম করার মাধ্যমে আমাদের শ্বাসকষ্ট নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে। এর জন্য আমাদের নাক দিয়ে আস্তে আস্তে নিঃশ্বাস নিতে হবে এবং মুখ দিয়ে অনেক হালকা ভাবে নিঃশ্বাসটি ছাড়তে হবে। এটি তিন থেকে চারবার করতে হবে। এরপর হাটু হালকা ভাঁজ করে ডান পা তুলতে হবে। তারপরে বাম পা তুলতে হবে এইভাবে ডান পা বাম পা ৩০ সেকেন্ড এমন ভাবে তুলতে হবে।
এরপরে আবার নাক দিয়ে আস্তে আস্তে হালকা ভাবে নিঃশ্বাস নিতে হবে। তারপরে মুখ দিয়ে হালকা আস্তে আস্তে সময়ে নিয়ে নিঃশ্বাস ছাড়তে হবে। এটিও তিনবার করতে হবে। এইভাবে ব্যায়াম করার মাধ্যমে শ্বাসকষ্টের সময় সেটি দূর হতে সাহায্য করবে।
শ্বাসকষ্ট কি
শ্বাসকষ্ট হওয়ার কোন বয়স থাকেনা. এটি যে কোন বয়সের যেকোনো সময়তে হতে পারে। শ্বাসকষ্ট হলো এমন একটি রোগ এটি হলে আপনি ঠিকমতো শ্বাস নিতে পারবেন না। আপনার বুকের মধ্যে কেমন জানি অনুভব হবে, আপনি কোন ভাবে শ্বাস নিতে পারবেন না।
এমন অবস্থায় আপনি শুধু হাঁপাতেই থাকবেন। আপনার শ্বাসকষ্ট এমন সময় হতে পারে। যেমন আপনি অনেক দ্রুত দৌড়াচ্ছেন বা অনেক অনেকক্ষণ ধরে জগিং করছেন এমন অবস্থায় আপনার শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
তবে এটি নিজের থেকেই ঠিক হয়ে যেতে পারে যদি এটি জগিং কিংবা দ্রুত দৌড়াদৌড়ি কিংবা শরীরে অনেক ক্লান্তির কারণে হয়। আর যদি আপনার শ্বাসকষ্ট ঘুমানোর সময় অনুভব হয় এর কারণ হলো (PND)।
শ্বাসকষ্ট হলে কি খাওয়া উচিত না
শ্বাসকষ্ট হলে আমাদের কিছু ধরনের খাবার অতিরিক্ত পরিমাণে না খায় ভালো। এগুলো খাওয়ার মাধ্যমে আমাদের শ্বাসকষ্ট বেড়ে যেতে পারে। এর জন্য এই সময় চা বা কফি বা অন্যান্য পানীয় খাবার বেশি পরিমাণে না খাওয়াই ভালো।
এটি আমাদের দেহের প্রদাহ কমালেও শ্বাসকষ্ট সৃষ্টি করতে পারে। মাছের ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড এই সময় প্রচুর পরিমাণে ক্ষতি করে। এর জন্য এই ধরনের খাবার না খাওয়াই ভালো।
আমাদের পরামর্শ
শ্বাসকষ্ট হওয়ার সাথে সাথেই আমাদের নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করাই ভালো। কেননা বাসায় চিকিৎসা করার মাধ্যমে এটি গুরুতর সমস্যা হতে পারে। এর জন্য এটি ভালো হবে যে শ্বাসকষ্ট হবার সাথে সাথেই রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে অভিজ্ঞ ডাক্তারের কাছে দিয়ে ভালোভাবে ট্রিটমেন্ট করাতে হবে।
আর যদি ডাক্তারের কাছে যাওয়ার মত পরিস্থিতি না থাকে তাহলে আমাদের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করার মাধ্যমে আপনার শ্বাসকষ্ট নিয়ন্ত্রণে চলে আসতে পারে।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url