শিশুদের ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা হলে করণীয় কি? বিস্তারিত জানুন

প্রিয় পাঠক সবার জানা অনেক জরুরী যে, শিশুদের ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা হলে করণীয় কি? বিস্তারিত জানুন। নিজের বিস্তারিত বর্ণনা করা রয়েছে।                                     শিশুদের ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা হলে করণীয় কি

আজকে আমরা জানবো ডায়রিয়া ও পাতলা পায়খানা হলে কি করনীয়? এবং এগুলো জানার পরে আপনি আপনার বাচ্চার ডায়রিয়া কিংবা পাতলা পায়খানা হলে যথেষ্ট পরিমাণ নিজেই চিকিৎসা করতে পারবেন।

সূচিপত্রঃ শিশুদের ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা হলে করণীয়,

শিশুদের ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা হলে করণীয় কি? বিস্তারিত জানুন

যদি রাতের বেলায়  শিশু বাচ্চার পাতলা পায়খানা হয়। তাহলে তো আমরা আর সেই সময়তে ডাক্তারের কাছে কিনবা হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারবো না। কারণ গভীর রাতে এগুলো করা একটু সমস্যা দায়ক। এর জন্য যদি আমরা বাড়িতে এর চিকিৎসা করতে পারি তাহলে আমাদের অনেক ভালো হবে। এমনই কিছু উপায় আছে যেগুলো করলে বাচ্চার পাতলা পায়খানা ঠিক হয়ে যেতে পারে। 

এর জন্য আমাদের বাসাতেই তৈরি করতে হবে খাবার  স্যালাইন। এর জন্য এক লিটার গরম পানি একদম ফুটিয়ে নিতে হবে। তারপরে ফুটানো শেষে সেই পানি টিকে একদম ঠান্ডা করে ফেলতে হবে। তারপরে এক মুষ্টি চিনি বা এক মুষ্টি পরিমাণ গুড় তার মধ্যে দিতে হবে কিংবা 6 চা চামচ চিনি দিতে পারেন। আর এই পানির মধ্যে হাফ চামচ লবণ দিতে হবে। 

এরপরে এটিকে সম্পূর্ণরূপে একসাথে গুলিয়ে তারপরে আপনার বাচ্চাকে সেই একটি পান করান। ১ ঘন্টা পর পর কয়েকবার এবং যদি ভাতের মার, চিড়ার পানি কিংবা ফলের রস আপনার বাচ্চাকে সেই সময় খাওয়াতে পারেন। এবং এর পাশাপাশি আপনার বাচ্চাকে বুকের দুধও খাওয়াতে পারে

শিশুদের ডায়রিয়ার লক্ষণ গুলো কি কি?

শিশুদের বা আমাদের প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ডায়রিয়া হওয়ার পরে মূল সমস্যা হলো আমাদের শরীরে পানি শূন্যতা হয়। আর এই পানি শূন্যতা যদি দূর না করা যায়। তাহলে ঘটতে পারে মর্মান্তিক সমস্যা। এর জন্যই আমাদের লক্ষণগুলো জেনে রেখে তা বুঝে ডায়রিয়ার চিকিৎসা করতে হবে।

  • যখন আপনার বাচ্চার ডায়রিয়া হবে তখন আপনার বাচ্চার মুখ শুকিয়ে শুকনা শুকনা হয়ে যাবে। চোখ মুখ শুকিয়ে আসবে।
  • বাচ্চা হয়তো বা পানির জন্য কান্না করতে পারে। বাচ্চার অনেক পিপাসা লাগবে যেহেতু পানি শূন্যতা হয়েছে। এর জন্য পিপাসা লাগাটাই স্বাভাবিক‌। অতিরিক্ত পিপাসা লাগাই হলো ডায়রিয়ার লক্ষণ।
  • যখন ডায়রিয়া হবে তখন পানি শূন্যতার কারণে চোখের মধ্যে যে হালকা আবরণের পানি থাকে। সেই পানিটি শুকিয়ে যাওয়ার মতো হয়ে, চোখ খসখসে বা শুকনা শুকনা দেখাতে পারে বাচ্চার।
  • পানি শূন্যতার কারণে বাচ্চার প্রস্রাব অনেক গাঢ় হলুদ হতে পারে। এবং তীব্র গন্ধযুক্ত প্রস্রাব হতে পারে। যেহেতু শরীরে পানি শূন্যতা এর জন্য প্রস্রাব বেশি পরিমাণে নাও হতে পারে। তবে যেটুকু হবে সেটুকু গাঢ় হলুদ প্রস্রাব হবে।‌
  • ঝিমঝিম করা বা মাথা ঘোরানো কিংবা শরীর অনেক ক্লান্ত অনুভব করা। শরীর ঝিমিয়ে পড়বে বা অনেক ক্লান্ত দেখাবে বাচ্চাকে।
  • ডায়রিয়া হলে ছোট বাচ্চাদের শ্বাস প্রশ্বাসের গতি ও হার্টবিটের লাফানোর স্পিড বেড়ে যায়। যা স্বাভাবিক সময়ের থেকে একটু বেশিই দ্রুত হয়।
  • বাচ্চা যখন কান্না করবে তখন দেখবেন বাচ্চার চোখ দিয়ে কোন ধরনের পানি বের হচ্ছে না। তখন বুঝবেন ডায়রিয়া হয়েছে।
  • মাথার ওপরের যে পাতলা তুলতুলে একটি নরম অংশ থাকে ওই জায়গাটা ভিতরের দিকে ঢুকে যাওয়া।

শিশুর জন্য ডায়রিয়া মারাত্মক কেন?

ডায়রিয়া মূলত পেটের মধ্যে খারাপ কোন কিছু নোংরা ঢোকার কারণে হয়ে থাকে। ছোট বাচ্চারা যখন কোন নোংরা কিছু মুখের মধ্যে দিয়েই বা খেয়ে ফেলে। তখন তাদের ডায়রিয়া হয় ডায়রিয়া হলে শরীরে অনেক পানি  শূন্যতা দেখা দেয়। একটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের চেয়ে একটি শিশু শরীরে পানির পরিমাণ কম থাকে। 

যে কারণে শিশুদের ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা হলে সেই পানি টি শরীর থেকে বের হয়ে আসে। যে কারণে তার শরীরে অনেক পানি শূন্যতা দেখা দেয়। এর জন্যই শিশুদের ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা হলে মারাত্মক সমস্যা হতে পারে। এর জন্যই আজকে আমরা শিশুদের ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা হলে করণীয় কি তাই আজকে জানবো‌।

বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা হলে কি খাবার খাওয়াতে হবে

আমরা যখন খারাপ খাবার বা পচা বাঁশি খাবার খায়। তখন আমাদের বা বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা হয়। আমরা যদি কোন মেয়াদ উত্তীর্ণ খাবার খাই তাহলেও আমাদের পেটে সমস্যা হয়ে, এটি পাতলা পায়খানাই পরিণত হবে। যখন ডায়রিয়া হয় তখন আমাদের বা শিশুদের শরীর থেকে অনেক পরিমাণে পানি বেরিয়ে আসে। এর জন্যই সেই পানি শূন্যতা দূর করতে হবে। 

এর জন্য খাওয়াতে হবে  স্যালাইন, জুস ডাবের পানি বা অন্যান্য তরল খাদ্য। কিন্তু সব সময় আমাদের তরল খাদ্যই কিন্তু শরীরে শক্তি দেয় না। এর জন্য শক্তি উৎপন্ন কারী এমন খাদ্য খাইতে হবে। কারণ পাতলা পায়খানা করে, করে তখন শিশুর বা আপনার শরীর অনেক দুর্বল হয়ে পড়বে। এর জন্য শক্তি উৎপন্ন কারী খাবার খেতে হবে।

আরো পড়ুনঃ রুটি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং এর পুষ্টিগুণ

নবজাতক শিশুর পাতলা পায়খানা হলে করণীয়

একটি নবজাতক শিশুর যখন ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা হয়। তখন সে তার শরীর থেকে পটাশিয়াম হারিয়ে ফেলে। এর জন্য তাকে বুকের দুধের পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন রয়েছে এমন জাতীয় খাবার খাওয়াতে হবে। 

কিংবা আপনি পানি গরম করে একদম ঠান্ডা করে নিয়ে ১ লিটার পানির মধ্যে ওয়াল  রিহাইড্রেশন সলিউশন পাউডার মিশিয়ে নিয়ে, এক ঘন্টা পর পর কয়েকবার করে তাকে সেই পানি পান করান। এতে করে তার ডায়রিয়ার সাথে সাথে শরীরের মধ্যে এনার্জি চলে আসবে।

১০ মাসের শিশুর পাতলা পায়খানা হলে করণীয়

যখন একটি ছোট শিশুর পাতলা পায়খানা হয়। তখন তার শরীরের মধ্যে অনেক ধরনের পুষ্টি এবং শক্তির ক্ষয় হয়। এর জন্য সে শিশুটিকে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো প্রয়োজন। এর জন্য শিশুটিকে ভালো করে ফলে জুস, ডাব এর পানি, খাবার স্যালাইন আরো অন্যান্য কিছু খাওয়াতে পারেন। যদি আপনার বাচ্চা ভাত খাওয়া শুরু করে তাহলে তাকে আপনি পুষ্টিকর খাবার দিয়ে ভাত খাওয়াতে পারেন।

ডায়রিয়া হলে কি ওষুধ খাওয়া উচিত

ডায়রিয়া হলে আমরা যদি Zinc ট্যাবলেট খায়। তাহলে এটি আমাদের ডায়রিয়া অনেকটাই কমিয়ে আনবে। ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী ১০ থেকে ১৪ দিনের জন্য Zinc ট্যাবলেট বা সিরাপ খাইতে পারেন। আর যদি পেটের মধ্যে কোন ধরনের অস্বাভাবিক সমস্যা দেখা দেয় তাহলে প্যারাসিটামল খাওয়া যেতে পারে। 

কিংবা পাতলা পায়খানা বন্ধ করে রাখার জন্য আপনি লপেরামাইড ওষুধ খাইতে পারেন। যেটি আপনার হঠাৎ পায়খানা হওয়া থেকে আটকাবে এবং ওষুধগুলো বয়স অনুযায়ী ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়ার পরে খাওয়া প্রয়োজন। 

আরো পড়ুনঃ শরীর দুর্বল থেকে দ্রুত মুক্তির ৫ টি  উপায় ও বিস্তারিত

শিশুদের ডায়রিয়া কত দিনে ভালো হয়?

যদি আমরা ডাক্তারের পরামর্শ মত চললি এবং যে ওষুধ ও নিয়ম-কানুন গুলো ডাক্তার করতে বলেছে। সেগুলো অনুযায়ী বাচ্চাদের ঠিকমতো সেবা যত্ন করি তাহলে ধরা যায় যে ৭ দিনের মাথায় ডায়রিয়া ভালো হয়ে যাবে। ডায়রিয়া হলো একটি রোগ যেটি কিনা ওষুধ, সেবা, যত্ন ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার মাধ্যমে সেরে যায়।

বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা হলে কোন ঔষধ খেতে হবে?

প্রথমত বাচ্চাদের ক্ষেত্রে আমরা খাবার স্যালাইন খাওয়াতে পারি। কিন্তু মাথায় রাখতে হবে এটি যেন এক লিটার পানির মধ্যে মিশিয়ে খাওয়া যায়। কেননা আমরা যদি কম পানির মধ্যে এটি মিশিয়ে বাচ্চাদের কে খাওয়াই। তাহলে সেই খাবার স্যালাইনের পানিতে অতিরিক্ত লবণের পরিমাণ বেড়ে যাবে।

এবং শিশুর শরীরে অতিরিক্ত লবণ প্রবেশ করবে যার ফলে শিশু শরীরে অনেক ধরনের ক্ষতি হতে পারে। কিংবা মারাত্মক সমস্যা দেখা দিতে পারে। এর জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তার বয়স অনুযায়ী সেই ওষুধ খাওয়াই উত্তম।

আমাদের পরামর্শ

ডায়রিয়া হোক কিংবা পাতলা পায়খানা আমাদের খাবার স্যালাইন খাওয়ার পরে এবং ঘরোয়া চিকিৎসা নেওয়ার পরে যদি এটি না ঠিক হয়। তাহলে আমাদের একটি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সেই অনুযায়ী ওষুধ খাওয়ায় ভালো। এবং শিশুদের ক্ষেত্রে এটি আরো গুরুত্বপূর্ণ এর জন্য সাবধানের শহিত ডায়রিয়া ও পাতলা পায়খানার চিকিৎসা ডাক্তারের কাছে করাতে হবে। আর আপনি ওপরের কোনো বিষয় যদি না বুঝতে পারেন তবে আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আমরা বিস্তারিত বোঝানোর চেষ্টা করব।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url